মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলে আমাদের সম্পর্ক চ্যালেঞ্জে পড়বে না

বিশেষ প্রতিনিধি : মার্কিন নিবার্চনে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই জয়ী হোক না কেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

শনিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব বিষয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

শফিকুল আলম বলেন, প্রফেসর ইউনূসের সাথে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দুই পার্টিরই সিনিয়র লিডারদের খুব ভালো সম্পর্ক। তার বন্ধু দুটি দলের মধ্যেই আছে। সম্পর্ক অনেকখানি নির্ভর করে ব্যক্তিগত অ্যাটাচমেন্টের ওপর। ড. ইউনূস একজন গ্লোবাল লিডার। তাই, মার্কিন নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বা ডোনাল্ড ট্রাম্প যে-ই জয়ী হোক না কেন, আমাদের সম্পর্কে কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমরা চাচ্ছি, তাদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক বজায় থাকুক।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তাতে আমরা সারা বিশ্বের সাপোর্ট পেয়েছি। পতিত স্বৈরাচার সরকারের সাথে ইন্ডিয়া থাকা সত্বেও তা কোনো কাজে আসেনি। জনগণ জেগে উঠলে কোনো অপশক্তিই টেকে না।

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে তিনি, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ডোমেস্টিক পলিটিক্যাল ইস্যু। লবিস্টরা হয়ত এ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়নি। বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ইউনিটি কাউন্সিল ৯ জন সংখ্যালঘু মারা যাওয়ার বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এখানে রিলিজিয়াস মোটিভিশনের চাইতে পলিটিক্যাল অ্যাফিলিয়েশন বা অন্য কোনো কারণ ছিল।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নিবার্চনের আগমুহূর্তে এক টুইটারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করায় পতিত সরকার মনে করছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের ফিরে আসা সহজ হবে। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তার সাথে মোদির সম্পর্ককে পুঁজি করে তারা রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হবার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পতিত স্বৈরাচারকে এ দেশের ছাত্র-জনতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর গ্রহণ করবে না।

তিনি বলেন, মার্কিন নির্বাচনের কয়েক দিন আগে গত পরশু হঠাৎ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সংঘ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দার বিষয়ে কেউ কেউ রহস্য খোঁজার চেষ্টা করছেন। আসলে এটি ট্রাম্পের ভোটের রাজনীতির কৌশল। যেহেতু, কমলা হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত, আমেরিকায় অবস্থানরত ভারতীয়রা বেশিরভাগই কমলাকে সমর্থন দেওয়ায় ট্রাম্প হিন্দুদের সিম্প্যাথি পাবার জন্য এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন নির্বাচনে যে-ই বিজয়ী হোক না কেন, তাদের পররাষ্ট্রনীতি খুব একটা বেশি পরিবর্তন হয় না। এছাড়া, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস সারা বিশ্বে জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলেও বর্তমান সরকারের সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক আরও মর্যাদাভিত্তিক হবে। অন্যদিকে, কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন ও অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। তাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আমাদের সম্পর্কে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘আগামী মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না’ শীর্ষক ছায়া সংসদে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, অধ্যাপক ড. এ কে এম মাজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হাসিব, সাংবাদিক আশিকুর রহমান অপু ও সাংবাদিক মো. আতিকুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *