স্বপ্নরথের শুভযাত্রা

ক্রিয়া প্রতিবেদক : ঠিক এমন কিছুর অপেক্ষায় ছিলেন সাকিব আল হাসান। শুধু কি সাকিব আল হাসান-ই নাকি ৫৬ হাজার বর্গবাইলের বাংলাদেশ। অস্বস্তিতে ঘেরা এক শিবির কেবল লড়াইয়ের প্রেরণা নিয়ে মাঠে নেমে স্বস্তির পরশ দিয়ে গেল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। ধর্মশালার হিম শীতল বাতাস স্তুতি ছড়াল লাল সবুজ প্রতিনিধিদের। 

সকালের ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ স্লোগান বিকেলে রূপ নেয় বিস্ফোরিত জয়ধ্বনিতে। রৌদ্রজ্জ্বল তপ্ত গরমে ‘আমরা জিতবো-ই’ বলে সাত সকালে যে বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন সমর্থকরা, বিকেলে তা রূপ নেয় ‘আমরা জিতে গেছি’ উল্লাসে। স্বপ্নরথের শুভযাত্রার চওড়া হাসি এমনই হয়। 

আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচকে ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল, মাঠের ক্রিকেটে তার ছিঁটেফোঁটাও দেখা মিলল না। বাঘের গর্জনে স্রেফ অসহায় আফগানিস্তান। ‘এবার না হলে আর কখন’ মন্ত্রে নিজেদের উজ্জীবিত রাখা ড্রেসিংরুমের স্বপ্নসারথীরা প্রথম ম্যাচ জিতে নিল ৬ উইকেটের ব্যবধানে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জয়ের হ্যাটট্রিকও। ২০১৫, ২০১৯ ও আজ, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে জয়ের রেকর্ড ধরে রাখল বাংলাদেশ। 

২০০৭ থেকে শুরু করে ২০১৯ বিশ্বকাপ। টানা চার বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছে ফিফটি রানের ইনিংস। ধর্মশালায় আফগানিস্তানের দেওয়া ১৫৯ টার্গেটে সাকিব যখন ব্যাটিং করতে নামেন তখন জয় থেকে মাত্র ৩৩ রানে দূরে বাংলাদেশ। টানা পাঁচের অনন্য অর্জনে তাই সাকিবের নাম লেখানোর সুযোগ হয়নি। হলে মন্দ হতো না নিশ্চয়ই। 

৯২ বল আগে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলার নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ হলেও ম্যাচের মোড় পাল্টে দিয়েছেন বাংলাদেশের সুপারস্টাই। সকালে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ইব্রাহিম জাদরান ও রহমানউল্লাহ গুরবাজের মারকাটারি ব্যাটিংয়ে বড্ড এলোমেলো লাগছিল বাংলাদেশকে। পাওয়ার প্লে’তে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় দ্রুত রান আসতে থাকে দুই আফগানের ব্যাট থেকে। মোস্তাফিজ, শরিফুল ও তাসকিনকে অনায়েসে খেলা এই ব্যাটসম্যানের সামনে সাকিব হয়ে আসেন জুজু হয়ে। তাতেই সব ওলটপালট। সাকিব ব্রেক থ্রু এনে দেন ইব্রাহিমকে ফিরিয়ে। এরপর তার ঘূর্ণিতে পরাস্ত রহমত শাহ। 

ম্যাচের নায়ক মিরাজের বল হাতে প্রথম সাফল্য আসে আফগান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদিকে ফিরিয়ে। তার বল উড়াতে গিয়ে লং অফে তাওহীদের হাতে ক্যাচ দেন। ১১২ বলে তৃতীয় উইকেট হারানো আফগানিস্তান পরের ১৪ রানে হারায় রহমানউল্লাহ গুরবাজ (৪৭), নাজিবুল্লাহ জাদরান (৫) ও মোহাম্মদ নবীকে (৬)। সাকিব নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তুলে নেন নাজিবুল্লাহর উইকেট। মোস্তাফিজের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ডিপ কভারে ক্যাচ দেন রহমানউল্লাহ। আর মোহাম্মদ নবীর উইকেট উপচে ফেলেন তাসকিন। 

আফগানিস্তানের লেজ কাটা ছিল তখন সময়ের ব্যাপার। মিরাজ দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নেন। রশিদ খানকে বোল্ড করার পর মুজিবকেও একই উপায়ে ফিরিয়ে আফগান শিবিরে শেষ পেরেকটি ঠুকিয়ে দেন এই অফস্পিনার। তাতে বল হাতে তার অবদান দাঁড়ায়, ৯-৩-২৫-৩। আর সাকিব সমান সংখ্যক উইকেট পেয়েছেন ৩০ রানে। 

প্রস্তুতি ম্যাচে ৬৭ ও ৭৪ রানের দুটি ইনিংস খেলে মিরাজ নিজেকে তৈরি করেছিলেন ভালোভাবে। নাগালের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৭৩ বলে ৫৭ রানের ইনিংসটি ম্যাচ জেতার জন্য যথেষ্ট হয়ে উঠে। আর শান্তর ৮৩ বলে ৫৯ রান ছিল চেরি অন দ্য টপ। দুজনের ৯৭ রানের জুটি তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ফেললে বা ম্যাচ জিতিয়ে আসলে হয়তো স্কোরকার্ড সুন্দর দেখাত। হয়নি বলে খুব আফসোস করারও নেই। কারণ এই ম্যাচে প্রাপ্তির খাতায় সবকিছুই পেয়েছে বাংলাদেশ। 

ইনিংসের শুরুতে তানজিদ রান আউট হয়ে ফিরলেও লিটন ফারুকির বল উইকেটে টেনে বোল্ড হয়েছেন। সাকিবও চাইলে ম্যাচ শেষ করে আসতে পারতেন। কিন্তু আজমত উল্লাহর বল উড়াতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন ১৪ রানে। আউট হয়ে নিজেই বুঝেছেন ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারলে আনন্দটা দ্বিগুণ হতো। 

এই ম্যাচ থেকে প্রাপ্তির খাতায় পূর্ণ নাম্বার নিয়ে বাংলাদেশ অপেক্ষায় ইংল্যান্ডের। যারা প্রথম ম্যাচে স্রেফ উড়ে গিয়েছিল নিউ জিল্যান্ডের কাছে। ধর্মশালার নান্দনিক সৌন্দর্যে আরেকটি সুন্দর দিনের প্রত্যাশা বাংলাদেশ করতেই পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *