রুহুল কবির রিজভীকে বিএনপি কেন মূল্যায়ন করছে না ?

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকায় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের নাম না থাকা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালো আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। বিগত দিনে মামলা-হামলা মোকাবিলা করা, রাজপথের লড়াকু সৈনিক এবং পরীক্ষিত, ত্যাগী ও অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে তাঁর অপরিহার্যতা আরও বেশি করে সামনে এসেছে।
একজন কেন্দ্রীয় স্তম্ভের ইতিবাচক ভূমিকা রাখা
রিজভী আহমেদের গুরুত্ব কোনো একক আসনের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়; বরং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাঁর দৃঢ় সাংগঠনিক ক্ষমতা ও অবিচল নেতৃত্ব বিএনপির জন্য এক মূল্যবান সম্পদ।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতর সম্পাদক ও মুখপাত্র হিসেবে তিনি কেন্দ্রীয় কার্যক্রমের মূল চালিকাশক্তি। সংকটের মুহূর্তে দলের প্রধান কার্যালয়কে কার্যকর রাখা এবং সারা দেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় তাঁর ভূমিকা অনন্য ও বিকল্পহীন।

মুখপাত্র হিসেবে সাহসী ও আপসহীন কণ্ঠস্বর: মিডিয়াতে দলের মুখপাত্র হিসেবে তিনি সর্বদা সাহসী ও স্পষ্টবাদী বক্তব্য তুলে ধরেন। তাঁর অবস্থান দলের আন্দোলন ও বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে সহায়ক। দলের প্রয়োজনে তাঁকে প্রায়শই ফ্রন্টলাইনে দেখা যায়, যা কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণা জোগায়।

আদর্শিক ও পরীক্ষিত নেতা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) হিসেবে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তাঁকে দলের একজন আদর্শিক ও পরীক্ষিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ ও সংগ্রাম: গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে একাধিকবার কারাবরণ এবং শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও দলীয় দায়িত্ব পালনে তাঁর অবিচলতা কর্মীদের কাছে ত্যাগের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি ‘মামলা-হামলার শিকার, রাজপথের লড়াকু সৈনিক’ হিসেবেই জনগণের মাঝে পরিচিত।

জনদাবি ও কৌশলগত বিবেচনা: পুনর্বিবেচনা কেন জরুরি?

বিএনপির অভ্যন্তরের শুভাকাঙ্ক্ষী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জনগণের প্রাণের দাবি অনুযায়ী—
দলের বৃহত্তর স্বার্থে, তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তাকে শুধু কেন্দ্রীয় মুখপাত্র হিসেবে নয়, বরং সরাসরি নির্বাচনী মাঠে কাজে লাগানো অত্যন্ত প্রয়োজন।
পরীক্ষিত এই নেতাকে মনোনয়ন প্রদান করলে তা কেবল স্থানীয় নয়, বরং সারা দেশে দলের প্রতি তৃণমূলের আস্থা আরও সুসংহত করবে এবং নির্বাচনী প্রচারে এক শক্তিশালী ইতিবাচক বার্তা দেবে।
নির্বাচনের ফলাফলে সুদূরপ্রসারী ভালো ফল পেতে দলের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা কৌশলগতভাবে লাভজনক হবে।

জনমনে প্রশ্ন: এই নেতাকে দল কেন মূল্যায়ন করছে না? সংস্কারপন্থীদের তৎপরতাই কি এর কারণ? ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে নির্যাতনের শিকার এই নেতা বেগম খালেদা জিয়া যখন বন্দী, তারেক রহমান যখন দেশে ফিরতে নিষিদ্ধ, তখন কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে এবং নেত্রীর মুক্তির দাবিতে নিয়মিত নেতাকর্মীদের নিয়ে সরব ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী আহমেদ একটি নাম নয়, তিনি বিএনপির আন্দোলনের প্রতীক এবং সংগঠনের দুর্গ, যার অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ দলের ভবিষ্যৎ জয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনদাবির মুখে দল শেষ পর্যন্ত তাঁর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে কি না, এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছে সারাদেশের রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *