প্রতীক পেয়েই ভোটারদের দুয়ারে প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিনিধি : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই প্রচারে নেমেছেন বিভিন্ন দলের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি নিয়ে তারা ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকরা। চলছে গণসংযোগ, মিটিং, মিছিল। শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। 

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া শুরু করার পর সকাল থেকেই নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণার সময় পাচ্ছেন ১৯ দিন। আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। ৭ জানুয়ারি দেশের ৩০০ আসনে একযোগে হবে ভোট গ্রহণ।

৬৪ জেলার রিটার্নিং অফিসার এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর আসনগুলোর রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, মোট মনোনয়নপত্র দাখিলের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭১৬, বাছাইয়ে বাতিল হয়েছিল ৭৩১, আপিল দায়ের করেছিল ৫৬০টি এবং আপিল মঞ্জুর হয়েছিল ২৮৬টি ও আপিল নামঞ্জুর হয়েছিল ২৭৪টি। সারা দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে ৩৪৭টি, স্থগিত আছে ৫টি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে মোট বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৯০২। এর মধ্যে পরে হাইকোর্টের রায়ে ৬ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এবার মোট ২৭টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে আচরণবিধি মেনে প্রার্থীদের প্রচার চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। প্রতীক বরাদ্দ ও প্রচার প্রসঙ্গে সচিব বলেছেন, আমাদের বার্তা একটিই—প্রত্যেক প্রার্থী যেন নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে প্রচার-প্রচারণা চালান।

প্রতীক পাওয়ার পর সড়কে সাইকেল চালিয়ে প্রচার শুরু করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সোমবার বিকেলে তার নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী আংশিক)-এ প্রচার চালান তিনি। বিকেল ৩টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে সাইকেল চালিয়ে রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী, ঘাটচেক, রোয়াজারহাট, থানা সদর, কলেজ গেট হয়ে মরয়মনগর চৌমুহনী গিয়ে পথসভায় অংশ নেন। দুই কিলোমিটার পথ সাইকেল চালানোর সময় দলীয় শতাধিক নেতাকর্মী তার সঙ্গে ছিলেন। পরে পথসভায় বক্তব্য দেন তিনি।

চট্টগ্রাম-৯ আসনে নির্বাচন করছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ আসনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কার্যালয় থেকে নওফেল নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পান। প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে মাঠে নেমেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। সোমবার বিকেলে তিনি নির্বাচনি এলাকা কোতোয়ালি থানার ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন।

ঢাকা-৪ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম। সোমবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর জুরাইন মাজার শরিফ প্রাঙ্গণ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেন তিনি। একই আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা লাঙলের পক্ষে ভোট চেয়ে বড় ধরনের শোডাউনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছেন। 

প্রতীক পেয়েই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ঢাকা-৮ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সোমবার দুপুরে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়োজনে নির্বাচনি প্রচার অনুষ্ঠানে অংশ নেন নাছিম। ঢাকা মেডিক্যালে কলেজে অনুষ্ঠান শেষে তিনি ঢাকা-৮ আসনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্মার্ট লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করেন। একই সময়ে ঢাকা-৮ আসনের ৯টি ওয়ার্ড ও ১১০টি ভোটকেন্দ্রে বাহাউদ্দিন নাছিমের পক্ষে থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং কাউন্সিলররা একযোগে স্মার্ট লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিতরণ করেন।

ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি  মো. কামরুল হাসান। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। রাজধানীর দনিয়ায় দনিয়া কলেজ অডিটোরিয়ামে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন তিনি। তার সঙ্গে এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। ১৬৫টি কেন্দ্রে কামরুল হাসানের সমর্থনে মিছিল করেছেন তারা।

রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জায়গায় প্রতীক পেয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন অনেকে। প্রতীক পেয়েই ভোটারদের কাছে ছুটে গেছেন নারায়ণগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন ভোটারদের কাছে। গোলাম দস্তগীর বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন করব, আমরা উন্নয়নের নির্বাচন করব। আমরা উন্নয়ন করেছি, সেই উন্নয়ন দেখেই জনগণ নৌকাকে ভোট দেবে।’

উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে। রাজশাহী-খুলনায় নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে প্রচারকাজ চালানোর আশ্বাস দিয়েছেন প্রার্থীরা। চট্টগ্রাম–১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল বলেছেন, ‘আমার ২০ বছরের পদচারণা মিরেরসরাইয়ে, সে কারণে তারা আমাকে এক্সসেপ্ট করে নিচ্ছে। আমি অনেক আশাবাদী যে, এখানে জয়ী হব।’

খুলনা–১ আসনে নৌকার প্রার্থী ননী গোপাল মন্ডল বলেছেন, ‘ভোটারদের আকর্ষণ করতে সমর্থ হলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করি।’ 

মাগুরা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান প্রতীক পেয়েই টুঙ্গিপাড়ায় যান বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা তার। সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘ভোটাররা যেন কেন্দ্রে এসে ৭ জানুয়ারি ভোট দেন। যাকে ইচ্ছা তাকেই ভোট দিতে পারবেন। আমি আশা করব, সবাই যেন আমাকেই ভোট দেন। কিন্তু, যদি তা না দেয়, কোনো আপত্তি নেই। আমি চাই, সবাই যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।’

শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথে বাধা দিলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নওগাঁ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থেকে যাতে সুস্ঠ সুন্দর গ্রহণযোগ্য উৎসবমুখর নির্বাচন করতে পারে, সেটাই এবার দেখিয়ে দেওয়া হবে।’

প্রতীক পেয়েই প্রার্থী ও সমর্থকদের নিয়ে জোরেশোরে গণসংযোগে নেমেছেন সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলার প্রার্থীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *