প্রতিমন্ত্রীর সভায় না আসায় হামলা, আহত ১৫

নিজস্ব প্রতিনিধি : পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আবাসিক হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় হামলাকারীরা হলের ১৫ জন শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে।

সোমবার (১৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় সদর উপজেলার দুর্গাপুরে অবস্থিত কলেজের ছাত্র হলে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় তিন শিক্ষার্থীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  তারা হলেন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক শাহরিয়ার, দ্বিতীয় বর্ষের সিফাত হাসান স্বপ্নীল ও আশিকুজ্জামান সজীব।

আহত অন্যরা হলেন ইলেক্ট্রনিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব, সিভিল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আয়নান চোধুরী, ত্রিপলি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইমরান, তৃতীয় বর্ষের মো. রকিব ও অলিফ ইভনে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরে গেছেন।

আহতরা জানান, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভোকেশনাল ও পলিটেকনিকের কোটা বাতিলের দাবিতে গত বুধবার থেকে তারা আন্দোলন করছেন। সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামীম কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করেন। গত রোববার রাতে তার আগমন উপলক্ষে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রেখে অনুষ্ঠানে আবাসিক ছাত্রদের উপস্থিত থাকার জন্য বলেন একই কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সাকিব ভুইয়া।

আহতরা আরও জানান, সোমবার সকালে সাকিব ভুইয়ার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন এসে আবার মিছিলে অংশ নিতে বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি বাদ দিয়ে মিছিলে অংশ নিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন সাকিব। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক-বির্তক হয়। তখন তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়। পরে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীরা বলেন, এরই রেশ ধরে রাত ৮টার দিকে সাকিব ভুঁইয়ার নেতৃত্বে কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রাবাসে হামলা করে। তারা অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। এতে শাহরিয়ার নামে এক শিক্ষার্থীর শরীরে ১৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। সিফাত ও সজিব নামে অপর দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এদিকে হামলার প্রতিবাদে এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা বরিশাল–ভোলা সড়কে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। 

পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ক ত্যাগ করেন।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাকিব ভূঁইয়া সাকিব বলেন, ‘কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হতে দিতে চায়নি বিএনপি-জামায়াতের একটি পক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা ম্যুরাল ভাঙচুরের চেষ্টা করে। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে সংঘর্ষ হয়।’

কলেজের সহকারী অধ্যাপক লিটন রাব্বানী বলেন, আমরা আপাতত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। এ বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কলেজের অধ্যক্ষ খলিল উদ্দিন বলেন, ‘কলেজে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। কারা চালিয়েছে আমি জানি না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’  তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ কোনো মন্তব্য করেননি।

চাঁদপুরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এইচ এম জাহিদ বলেন, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রদের একপক্ষ আরেক পক্ষকে হামলা করেছে। এ ঘটনার পর বরিশাল-ভোলা সড়কে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। এক ঘণ্টা পর পুলিশে এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, কলেজে দুইটি গ্রুপ রয়েছে। এক গ্রুপ হলে এসে অন্য গ্রুপের ওপর হামলা করে। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *