পেঁয়াজের হালি ৪০ টাকা!

বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা। মাঝারি গড়নের এই পেঁয়াজ কেজিতে ধরে প্রায় ২৩ পিস। সে হিসাবে ভোক্তাকে প্রতি পেঁয়াজে গুণতে হচ্ছে ১০ টাকা। এ ছাড়া, ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়, কেজিকে পাওয়া যায় ১৫ পিস। সেখানে ভোক্তা প্রতি পিসে দিচ্ছেন প্রায় সাড়ে ১১ টাকা। ভোক্তাদের অভিযোগ, জিজ্ঞেস করলেই বলা হয়; পেঁয়াজের দাম খুচরা বিক্রেতারা বাড়ান না, আড়তদারাও নয়, সরকার বা কৃষকরা নয়- তাহলে কারা বাড়াচ্ছেন হুট করে? 

রোববার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর নিউ মার্কেট, হাজারীবাগ, আজিমপুরের খুচরা বাজারে ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, অদৃশ্য কোনও ইশারায় দিন-কয়েক পরপরই বাজার অস্থির হয়ে উঠছে । হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী হাসান মিয়া বলেন, ‘গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই দাম বেড়ে যায়। আমাদের এখন কাওরান বাজার থেকেও বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। অনেক দোকানে পেঁয়াজই নেই।  আজকে দেশি পেঁয়াজ ২৩০ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের কেনাও বেশি। দাম আরও বাড়তে পারে’।

রাজধানীর হাজারীবাগে পেঁয়াজ কিনতে আসা গার্মেন্টসকর্মী হালিমা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এক রাতের ব্যবধানে নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ করা, এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি। এমনিতেই এখন আমরা সবাই কষ্টে আছি। বেতনও ঠিকমত পাচ্ছি না। তার মধ্যে পেঁয়াজের দাম এত বেড়েছে, যেটা জুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়’। 

পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর শ্যামবাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের বিশেষ অভিযানকালে ঢাকা জেলার সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ক্রেতাদের লাগলে আসবে বলে আশা করি। আর আমাদের মনিটরিং চলমান থাকবে।

শ্যামবাজার পেঁয়াজ-রসুন মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মো. সামসুর রহমান বলেন, কিছু কিছু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর আমাদের দেশের সাধারণ ক্রেতারা যখন শুনে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে, তখন চাহিদার তুলনায় বেশি সংগ্রহ করে। এই সুযোগটা অসাধু ব্যবসায়ী নেয়। তাই ক্রেতাদের কাছে অনেক থাকবে। প্রয়োজন মত সংগ্রহ করুন, কোনও সমস্যা হবে না।

এদিকে, রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনের মাল্টিপারপাস হলে ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ‌‌ বলেন, ১২০ টাকার পেঁয়াজ এক দিনের ব্যবধানে ২০০ টাকা হয়ে যায়, এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। আগের দিন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে, আর পরদিনই পেঁয়াজের দাম ৭০-৮০ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বুঝতে হবে, এদেশের জনগণের জন্যই তাদের ব্যবসা। অবশ্যই তারা লাভ করবেন। তাই বলে আগের দিন ছিল ১২০, একদিনের মধ্যে ২০০ টাকা হয়ে যায়- এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

এর আগে, ৮ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) জানায়, পেঁয়াজ রপ্তানিনীতি ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে, তবে তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অনুরোধের পর কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দেওয়া প্রদত্ত অনুমতির ভিত্তিতে। মূলত নিজেদের দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ভারত সরকার আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *