উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক কতটা ‘ফলপ্রসূ’ হলো

বিশেষ প্রতিনিধি : দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম কিছু বিষয় সামনে এনেছেন। বৈঠকে তিনি বলেছেন, ক্যাম্পাস কাজে সেনাবাহিনীর সাবেক কোনো অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজে পূর্বে হওয়া দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করবে। প্রকল্প পরিচালককে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনীর একজন সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”

“সেনাবাহিনীকে কোন প্রক্রিয়ায় কাজ হস্তান্তর করা যায়, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।”তিন মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে বৈঠকে আশ্বাস দেন উপাচার্য রেজাউল করিম।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসের পর জবি উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।এদিন দুপুরে শিক্ষা ভবনের বৈঠকে সেনাবাহিনীকে ক্যাম্পাসের কাজ দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, “প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হোক, এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। 

“ইউজিসির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সেনাবাহিনীকে কাজ দিতে চায়, এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো সমস্যা নেই। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে দেওয়ার জন্য আমরা সহযোগিতা করব।”উপাচার্যের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে এক প্রশ্নের জবাবে আন্দোলনের সংগঠক ও জবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী একেএম রাকিব বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিগত সময়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে কিছুই চায়নি। মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে, যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন কিছু দাবি করা হতো, আমরা সেটা দিতাম।

“কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তো কোনো কিছুই চাওয়া হয়নি। অথচ আমাদের উপাচার্য স্যার বলে আসছেন, তারা নাকি অস্থায়ী আবাসন ও সেনাবাহিনীর হাতে কাজ হস্তান্তর নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এ প্রশাসন জগন্নাথের জন্য লজ্জার।”তবে রাকিবের বক্তব্যের বিষয়বস্তু অস্বীকার করেছেন উপাচার্য রেজাউল করিম। বৈঠকে শেষে তিনি ছাত্রদের একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লিখিত দিতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন।

ঢাকার কেরাণীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে গত ৩ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, সেনাবাহিনীর কাছে কাজ হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে ৪ নভেম্বর থেকে আন্দোলনে নামছেন তারা।৪ নভেম্বর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ অবরোধে আটকা পড়েন উপাচার্য রেজাউল করিম।

তখন উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এটা এমন না যে, বললেই কাজ হয়ে যাবে। যা ১২ বছরে হয়নি, সেটা ১২ দিনে সম্ভব না। আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলছি, এটাও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে।”এই বক্তব্য দেওয়ার পর উপাচার্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে তাঁতীবাজার থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এ সময় উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডাকা হলে তারা তা প্রত্যাখান করে স্লোগান দিতে থাকেন।

পরদিন ৫ নভেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে দেন।গত ৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান ও অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি সুবিধা দেওয়ার জন্য অর্থ সংস্থান নিশ্চিত করতে হায়ার অ্যাডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট) প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে ইউজিসি। এ প্রস্তাবনার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে পাঁচ দফা দাবিতে গণপদযাত্রা নিয়ে শিক্ষা ভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন জবি শিক্ষার্থীরা। বিকেলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম তিন কর্মদিবসের মধ্যে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্প সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার আশ্বাস দেন।মঙ্গলবার দুপুরে উপচার্যসহ দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে পাঁচ দফা রোডম্যাপসহ আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ আশ্বাস পেয়ে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ক্যাম্পাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা।

এদিন শিক্ষার্থীরা পাঁচ দাবি আদায়ে অনঢ় অবস্থান নেন। দাবিগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি হলো- স্বৈরাচারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ প্রকল্প পরিচালককে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সাতদিনের মধ্যে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে সেনাবাহিনীর দক্ষ অফিসার নিয়োগ করতে হবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা আসতে হবে- সেনাবাহিনীর হাতে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর করা হয়েছে এবং হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা দিতে হবে (অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হল)।

বাকি তিন দাবি হলো- অবিলম্বে বাকি ১১ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পুরাতন ক্যাম্পাস নিয়ে স্বৈরাচার আমলে করা সব অনৈতিক চুক্তি বাতিল করতে হবে, সম্প্রতি ইউজিসির ঘোষণাকৃত পাইলট প্রকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজাউল করিমসহ শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রইছ উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক, আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *